যাদের আপন মনে করতাম, তারা কেউ কেউ আপন ছিল না: শাকিব খান

লেখক: বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

৯ মাস যুক্তরাষ্ট্রে থেকে প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে বিমানে চড়েছেন জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান। বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় তিনি নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। এই ৯ মাসে সেখানে অনেক মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ তৈরি হয়েছে, যাঁরা তাঁকে পরিবারের মানুষ ভেবে আপন করে নিয়েছেন এবং সমর্থন করেছে মানসিকভাবেও। এই উপলব্ধির কথা তিনি জানিয়েছেন তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে।

যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আপন মানুষের দেখা যেমন পেয়েছেন শাকিব খান, তেমনি এত দিন যাঁদের আপন মনে করতেন, তাঁরা কেউ তাঁর সত্যিকার অর্থে আপন ছিলেন না বলেও জানান দেশের চলচ্চিত্রের এই প্রভাবশালী তারকা। নতুন শাকিব খান তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘জীবন যখনই আমাকে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে অথবা নিজেই যখন নিজেকে ভেঙে গড়ার চ্যালেঞ্জ দিয়েছি— ওপরওয়ালার রহমতে এবং আমার লাখো–কোটি ভক্তের ভালোবাসায় সব সময় আমি জয়ী হয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে বিগত ৯টা মাসও আমার জীবনে ছিল একটি চ্যালেঞ্জের মতোই এবং আবারও আমি আপনাদের ভালোবাসায় তা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি।’

শাকিব খান নিউইয়র্কে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে তাঁর দুটি চলচ্চিত্র ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’ মুক্তি পায়। ঈদুল আজহায় ‘লিডার; আমিই বাংলাদেশ’ এবং ‘অন্তরাত্মা’ মুক্তির কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। গেল বছরের ১২ নভেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন শাকিব খান। চ্যানেল আইয়ের মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে সেখানে যান এ ঢালিউড তারকা। এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ঢাকায় ফেরার কথা থাকলেও দেশটিতে গ্রিন কার্ডের আবেদনের কারণে তখন আর দেশে ফেরা হয়নি তাঁর। গ্রিন কার্ডের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় নিউইয়র্ক সময় গত ২৯ জুলাই। এদিন সন্ধ্যায় সেখানে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসানসহ একটি আড্ডায় অংশ নেন শাকিব খান। নিউইয়র্কভিত্তিক একটি সংগঠনের আয়োজনে এই আড্ডায় প্রবাসী বাঙালিরা চলচ্চিত্র ও ক্রিকেটের দুই তারকাকে কাছাকাছি পেয়ে ছবি তোলেন ও আড্ডায় মেতে ওঠেন।

গেল ৯ মাসের মধ্যে শাকিব খান নিউইয়র্কে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নতুন ছবি ‘রাজকুমার’–এর মহরতও করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের মূলধারার চলচ্চিত্রের ডিস্ট্রিবিউশন ও চলচ্চিত্রের বাজার সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীসহ অনেকের সঙ্গে আলাপ করেছেন। কথায় কথায় শাকিব জানান, ‘এই ৯ মাস ছিল অনেকটা অদৃশ্য শিকলে বাঁধা পড়ে থাকা জীবনের মতো। খেয়াল করেছি, মহান ব্যক্তিরা যখন বড় কিছু করেন, তার আগে এমন বিচ্ছিন্ন থাকেন! তাঁরা যখনই নতুন উপলব্ধি নিয়ে আবার শুরু করেন, তখনই তাঁদের সকাল!’

যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সময়ের অনুভূতি প্রকাশ করে শাকিব খান তাঁর ফেসবুকে এ–ও লিখেছেন, ‘দূরদেশে এ সময় অনেককে পেয়েছি, যারা আমাকে তাদের পরিবারের মানুষ ভেবে আপন করে নিয়েছে, সাপোর্ট দিয়েছে মানসিকভাবে। অন্যদিকে এ–ও বুঝেছি, যাদের এত দিন আপন মনে করতাম, তারা কেউ কেউ সত্যিকার অর্থে আমার আপন ছিল না। এর মাঝেও আমার এগিয়ে চলার এই জীবনে অন্ধের মতো সবচেয়ে বড় সাপোর্ট ছিল, দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা লাখো-কোটি ভক্ত-অনুসারী—যারা সব সময় আমার পাশে থেকেছে, নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছে।’

শাকিব জানান, নিজেকে নিজে ভালোভাবে চেনা ও জানার তাঁর দূরদেশে থাকা সময়টা দরকার ছিল। তিনি বলেন, ‘কেন জানি মনে হয় নিজের জীবনদর্শন, বাস্তবতা ও সবকিছুকে নতুন করে চেনা-জানা এবং বোঝার জন্য আমার এই পরিবর্তন ভীষণ প্রয়োজন ছিল। এ সময় খুব কাছ থেকে নিজের জীবনের সবকিছু নতুন করে কল্পনায় এঁকেছি, যেমনটা সিনেমায় করে থাকি। সময়টা আমাকে পৃথিবী ও নিজের সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করেছে।’

প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে শাকিব খান জানান, ঢাকায় ফেরার পর এসকে ফিল্মসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠবেন। পাশাপাশি দেশের ও দেশের বাইরের একাধিক প্রযোজক আর পরিচালকের সঙ্গে নতুন ছবি নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা করবেন বলেও জানান তিনি। সরকারি অনুদান পাওয়া ছবি ‘মায়া’ (সম্ভাব্য নাম)–এর কাজ খুব শিগগির শুরু করতে চান বলেও জানান শাকিব।

এদিকে শাকিব খানের ঢাকায় ফেরার খবরে তাঁর ভক্তরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। প্রিয় নায়ককে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁর ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা জড়ো হওয়ার কথা জানিয়েছেন। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে শাকিবভক্তরা তাঁদের এই ইচ্ছার কথা জানান। কেউ বিমানে, কেউ ট্রেনে এবং কেউ বাসে করে ঢাকায় আসছেন। সেসব স্থিরচিত্রও ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করেছেন ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।