উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সঙ্কটকালে নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আগুনের ওপর ঘি ঢালার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। ৪০ টাকা হালির ডিম ঠেকেছে ৫৫ টাকায়। চালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা। ৮০ টাকা ডজনের কলা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। দেড়শ টাকার ব্রয়লার মুরগির কেজি হয়েছে ২০০ টাকা। এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিত্যপণ্যের খরচ পোষাতে না পেরে বাজার থেকে খালি ব্যাগ হাতে ফেরার মতো অবস্থা অনেকের।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আকিদুল ইসলাম। বাসা থেকে বউ কলা নিয়ে ফিরতে বললেও দোকানে ১২০ টাকা ডজন শুনে কলা না কিনেই বাসায় যান। তিনি বলেন, চার-পাঁচটা দোকান ঘুরে কম দামে কলা না পেয়ে খালি হাতেই বাসায় গিয়েছি।
অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর গত এক সপ্তাহে চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনো মরিচ, আদা, এলাচ, ব্রয়লার মুরগি, চিনি ও ফার্মের ডিমের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে কাঁচামরিচ, শাকসবজি, মাছ, দেশি মুরগি ও ফলসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম বেড়েছে। এমনকি গুঁড়া দুধ, সাবান, নারকেল-সরিষার তেল ও বিভিন্ন প্রসাধনীর দামও বেড়েছে এ সময়ের ব্যবধানে।
টিসিবি বলছে, তাদের তথ্যে গত এক সপ্তাহে বাজারে শুধুমাত্র আমদানি করা হলুদের দাম কমেছে। অন্যদিকে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই সেগুলো সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শুকনো মরিচের দাম। যা এখন প্রতি কেজি ৫০০ টাকা টাকা ছুঁই ছুঁই করছে। এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম ৬ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়েছে, খোলা আটা ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ময়দা ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ, বোতলজাত সয়াবিন তেল ২ শতাংশ, মসুর ডাল ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ, পেঁয়াজ ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগির ডিম ১০ শতাংশ ও ব্রয়লার মুরগির দাম ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া বেড়েছে রসুন, আদার দামও। একটি পরিবারের জন্য এসব পণ্যই প্রতিদিনের জন্য অপরিহার্য।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম হঠাৎ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি। এ ছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় বেশকিছু পণ্যের আমদানি-রফতানিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সময়ের আলোকে বলেন, যৌক্তিক কারণে দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে যৌক্তিকভাবে যা বেড়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা মুনাফাখোর হয়ে গেছেন। দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতাকে তারা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারকে এখন অত্যন্ত কঠোর হতে হবে, তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।